চিয়া সিড ব্যবহারে উপকারিতা ও অপকারিতা 1

 

বেশিভাগ মানুয এখন ওজন ও এর জন্য নানা জটিল রোগের সমস্যায় ভোগে। কারো ওজন যখন বেশী হয় তখন তাদের শরীরের কার্য ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। ফলে তাদের ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের রোগের মত বিভিন্ন গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়।

চিয়া সিড ব্যবহারে বিভিন্ন উপকারিতা

চিয়া সিডকে পুষ্টির পাওয়ার হাউজ বলা হয়।চিয়া সিডের উচ্চ ফাইবার সামগ্রী, বিশেষ করে দ্রবণীয় ফাইবার,পিত্ত অ্যাসিডের সাথে মিলিত হয়ে শরীর থেকে তাদের নির্গমনে সহায়তা করে কোলেস্টেরলের কমাতে সাহায্য করতে পারে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস সহ প্রদাহ হ্রাস এবং হৃদরোগের উন্নতি সাধন করে। চিয়া সিড ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমআতে পারে যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে আরও সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঃ অর্ডিনারি আইটিতে লেখালেখি করে ১৫,০০০ টাকা আয়

ডায়েটে চিয়া সিড অন্তর্ভুক্ত করে আপনি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। চিয়া সিডে ফাইবার প্রোর্টিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বির সংমিশ্রণ ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে যার জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। চিয়া সিডে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস,ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ জাতীয় খনিজ উপাদানগুলি আপনি ডায়েটের অন্তর্ভুক্ত করে আপনার হাড় সুস্থ রাখতে পারেন।

চিয়া সিড ব্যবহারে বিভিন্ন অপকারিতা

চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণের ফলে পেটে গ্যাস,পেট ফাঁপা, বদ-হজম বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। বেশী পরিমাণ পানি পান না করলে এটি আরো বেড়ে যেতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা য়ায যে, চিয়া সিড প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে চিয়া সিডে অ্যাালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

চিয়া সিডের ব্যবহার

চিয়া সিড রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এমন কিছ ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে। তাই যারা অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট জাতীয় ওষুধ সেবন করেন তাদের চিয়া সিড এড়িয়ে চলা উচিত। যাদের হজমতন্ত্রে আগে থেকে সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে চিয়া সিড খেলে সমস্যা বাড়তে পারে। এতে বেশী পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। তাই পরিমিত পরিমাণে না খেলে এটি অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

চিয়া সিডের ইতিবৃত্তান্ত

চিয়া সিড মূলত ইংরেজী শব্দ "Salvia Hispanica" নামের একটি উদ্ভিদের বীজ, যা মূলত মেক্সিকো ও গুয়াতেমালার এলাকায় জন্মে। "চিয়া" নামে পরিচিত অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে "সোনালী চিয়া"। চিয়া সিড 'সুপার ফুড' নামে পরিচিত।
সাধারণত চিয়া সিড ছোট চ্যাপ্টা ডিম্বাকার হয় যার গড় পরিমাণ ২.১ মিমি *১.৩ মিমি *০.৮মিমি (০.০৮ ইঞ্চি *০.০৫ ইঞ্চি * ০.০৩ ইঞ্চি ) গড় ওজন প্রতি সিডের ১.৩ মিলিগ্রাম। সিড সাধারণত বাদামী,ধূসর, কালো ও সাদা রঙের হয়ে থাকে। চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে রাখলে সিডের ওজনের ১২ গুন পর্যন্ত তরল শোষন করে একটি মিউকিলাজিনাস আবরণ তৈরি যা তাদের জেল টেক্সচার দেয়।

চিয়া সিডে থাকা পুষ্টিগুণের পরিমাণ


যে কোনো বীজ জাতীয় খাবারই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। পুষ্টিবিদরা চিয়া সিডকে উপাদান  সুপার ফুড নামে অভিহিত করেন। কারণ চিয়া সিডে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩,ফ্যাটি অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন,কেম্পফেরল,ক্লোরোজেনিক অ্যাাসিড ও ক্যাফিক অ্যাাসিড নামক অ্যাান্টি-অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম,ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন,ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীর ও আদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ।
চিয়া সিডের ব্যবহার

পুষ্টিকর বীজ খাবারের মধ্যে চিয়া সিড অন্যতম। চিয়া সিডে আছে দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশী ভিটামিন সি,পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশী আয়রন, কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম,মুরগির ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন,স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩। পুষ্টিকর এই খাবারটি সপ্তাহে ৭ দিনই খাওয়া যায়। সপ্তাহে৩-৪ দিন খেলেও উপকার পাওয়া যায়।

ওজন কমাতে চিয়া সিডের ব্যবহার

চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাসিড অ্যাসিড যা শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে এবং এর প্রভাবে দ্রুত ওজন কমাতে সহায়তা করে। চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার।ফলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত খিদে পায় না। এ ছাড়াও চিয়া সিডের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, যা পেটের চর্বি কমাতেও সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার

চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর আঁশজাতীয় উপাদান,যা খেলে আপনি পেট ভরা মনে করবেন। এর ফলে ক্ষুধা কম লাগবে।চিয়া সিডের সঙ্গে পানি মেশালে আয়তন কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন আপনি পরিমাণ মতো চিয়া সিড খেলে ক্ষুধা কম লাগবে এবং এর উপাদানগুলো ওজন কমাতে সহায়তা করবে।

আপনি কোন কোন পদ্ধতিতে চিয়া সিড খাবেন?


চিয়া সিড খাওয়ার আনেক নিয়ম আছে।তবে মধ্যে যে নিয়মে খেলে সর্বাধিক উপকার পাওয়া যায় সেগুলির আলোচনা নিম্নে দেওয়া হলোঃ

১। পানিতে ভিজিয়ে খাওয়াঃ ১-২ টেবিল চামচ চিয়া সিড এক গ্লাস পানিতে ২০-৩০ চিজিয়ে রাখুন।সিডগুলো ফুলে জেলির মত হয়ে যাবে।এটি সরাসরি পান করতে পারেন বা লেবুর রস বা মধু মিশিয়ে পান করত পারেন।

২। স্মুদি বা ফলের রসে মিশিয়েঃ ফলের রস বা স্মুদির পুষ্টিগুন আরও বেড়ে যায় চিয়া মেশালে। চিয়ার মধ্যে থাকা ফাইবার এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে প্রয়োজনীয় খনিজের জোগান দেয়।

৩। দই বা ওটসে যোগ করেঃ আপনি সকালে নাশতায় দই বা ওটসের সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খেত পারেন। এতে স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বাড়ে।

৪। স্যুপ বা সালাদে ব্যবহারঃস্যুপ বা সালাদে টপিং হিসেবে চিয়া সিড ব্যবহার করুন। এটি খাবারের ওপর হালকা ক্রাঞ্চি টেক্সচার যোগ হয়।

৫। চিয়া পুডিং তৈরিঃ ২ টেবিল চামচ চিয়া সিড ১ কাপ দুধে মিশিয়ে ফ্রিজে ২-৩ ঘন্টা বা সারা রাত রেখে ফল,বাদাম বা মধু দিয়ে আপনি খেতে পারেন।

৬। বেকিং তৈরিঃ প্যানকেক,মাফিন বা ব্রেডকেক বানাতে ময়দার সঙ্গে চিয়া সিড মিশিয়ে আপন ব্যবহার করতে পারেন।

চিয়া সিড ব্যবহারে যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়

প্রতিটি খাবারের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা কিছুনা কিছু থাকে পারে।অতিরিক্তএটি গ্রহনে সুফলের পরিবর্তে কুফলও বয়ে আনতে পারে। চিয়া সিড বাবহারের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এক নজরে দেখে যাকঃ

১। আপনি অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

২। আপনি অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে ওজনঅস্বাভাবিক ভাবে কমে যেতে পারে।

৩। চিয়া সিড দেহের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ কমায়। আপনি অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে রক্তচাপ বেশি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৪। আপনার অ্যালার্জি সমস্যা থাকলে চিয়া সিড এড়িয়ে না চললে অ্যালার্জি সমস্যায় পড়তে পারেন।

৫। চিয়া সিড গবেষণায় বলা হয় প্রোটেস্ট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারকে বাড়িয়ে দিতে পারে।

৬। অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে পেটব্যথা, গ্যাস, হজমের সমস্যা,ডায়েরিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৭। চিয়া সিড পানি শোষণে সাহায্য করে। অতিরিক্ত পরিমানে এটি খেলে আপনার ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হতে পারে।

শেষ কথাঃ চিয়া সিড ব্যবহারে উপকারিতা ও অপকারিতা

চিয়া সিড শরীরের জন্য সত্যিই একটি সুপার ফুড। এটি হজমে সহায়তা করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, হার্টের সুস্থ রাখে, ত্বক ও চুল ভালো রাখে, রক্তে শর্করা, কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের জন্য উপকারী। চিয়া সিড ফাইবার ও পানি শোষণ করে পেট ভরা রাখে এবং শক্তি যোগায়। তবে অতিরিক্ত গ্রহণে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে ,তাই পরিমিত সেবন করা উচিত।

বাংলায় একটি প্রবাদ বাক্য আছে," স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল"। আর এই স্বাস্থ্য ভাল রাখতে আপনি অবশ্যই সচেতন। স্বাস্থ্য ভাল রাখতে যেমন নিয়মিত খেলাধুলা,ব্যায়াম এবং শারীরিক কসরত এর প্রয়োজন। তেমনি স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও আপনার সুষম খাবারের প্রয়োজন। আমাদের শরীরে বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন বাড়তি খাবারের পাশাপাশি অতিরিক্ত চাহিদা পুরণের জন্য আপনি "চিয়া সিড" সুপার ফুড হিসাবে গ্রহণ করতে পারেন। আমি আশা করি আপনি অ্যার্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন। আপনি সুস্থ,সবল ও নিরোগ দেহের অধিকারী হউন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইয়োলোপাইসনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

Md. Abir Hossain
Md. Abir Hossain
একজন ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট ও অর্ডিনারি আইটির সিনিয়র সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার। তিনি অনলাইন ইনকাম, ব্লগিং, SEO ও টেকনোলজি নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। ৫ বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি শিক্ষার্থীদের অনলাইনে সফল হতে সহায়তা করে যাচ্ছেন।